করোনা সংক্রমণের হার ওঠা-নামার বিষয়টি নজরে রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় বিলম্ব হলেও যেন শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা যায়, এজন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং ২০২২ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনলাইনে শিক্ষাটা চালু রাখতে হবে। করোনা কখনও বাড়ছে কখনও কমছে। শীতে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়লে যেনো অনলাইনে শিক্ষাটা চালু রাখা যায়। এখন বিদ্যুতের সমস্যা নাই। শিক্ষাটা যাতে অনলাইনে শিক্ষার্থীরা চালাতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা করবো। কাজেই শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেও যেন মোবাইল ফোন, ল্যাপটপের মাধ্যমে, টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা চালু রাখতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাঙালি যাতে সুন্দর ও উন্নত জীবন পায়। এদেশের মানুষ শিক্ষা-দীক্ষায় নিজেকে আত্মমর্যাদায় উন্নীত করবেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ, প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধ্বংস করে ফেলেছিলো পাকিস্তানিরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশও নষ্ট করে ফেলেছিলো। খুব অল্প সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঠিক করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। বিনামূল্যে পাঠ্য বিতরণ, এমনকি কাপড় তিনি বিনামূল্যে বিতরণ শুরু করেন এবং শিক্ষা উপকরণ দেন।
মাত্র নয় মাসে জাতির পিতা যে সংবিধান দেন, সেখানে শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক করেন। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করে সব শিক্ষককে সরকারি চাকরি দেন এবং শিক্ষা যে মানুষের অধিকার সেটিকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
একই সঙ্গে আমাদের দেশের উপযোগী একটি শিক্ষা নীতিমালা তৈরির জন্য দেশের সবচেয়ে বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিক ড. কুদরত ই খুদাকে প্রধান করে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। তবে সেটি আর তিনি বাস্তবায়নের সুযোগ পাননি। কারণ ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসে মিলিটারি ডিক্টিটরিরা এই বিষয়কে তেমন গুরুত্বও দেয়নি। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে শিক্ষানীতি প্রণয়নে পদক্ষেপ নেয়।
এ সময় তার সরকারের সময়ে শিক্ষার উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোকালীন কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও রেজাল্ট দেওয়া, বই ছাপানো এবং বিতরণ করা এটা একটা কঠিন কাজ। তিনি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।
নতুন বই হাতে পাওয়ার পর ছোট্ট শিশুদের আনন্দ পাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ছোট্ট সোনামনিরা যখন হাতে বই পায়, এই বই পাওয়ার আনন্দ কিন্তু আলাদা। দুর্ভাগ্য যে ৭৫ এর পর নতুন বই দেয়াই হতো না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতি বছর ছেলে-মেয়েদের হাতে নতুন বই তাদের হাতে তুলে দেবো সম্পূর্ণ বিনাপয়সায়। একই সঙ্গে যারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধি তারা যে যেন পিছিয়ে না থাকে, তাদের জন্য ব্রেল পদ্ধতিতে বই ছাপিয়ে বিতরণ করছি। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিজস্ব একটি ভাষা আছে। তাদের বই আমরা প্রস্তুত করে তাদের হাতে দিচ্ছি, যাতে তাদের ভাষাটি ভুলে না যায়।
তিনি বলেন, করোনায় স্কুলে না আসতে পারলেও শিক্ষার্থীদের হাতে যেন বইটি দেওয়া হয় এবং তারা বাসায় বসে পড়তে পারে। অনলাইনে সংসদ টিভিটা আমরা শিক্ষা মন্ত্রণায়লকে ব্যবহার করতে দিয়েছি। সাথে সাথে বিটিভিও শিক্ষা কার্যক্রম প্রচার করেছে।
শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকা প্রথমে শিক্ষকদের দিয়েছি, এখন শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত যারা তাদের সবাইকে টিকা নেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সব শিক্ষার্থী যেনো টিকা দেয়, সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।